
দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আগের তুলনায় কিছুটা এগোলেও সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা থেকে এখনো বহু দূরে। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় কোনো রেফারেল সিস্টেম না থাকায় পুরো স্বাস্থ্যসেবায় বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। এতে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি করতে পারলে এ মাধ্যমেই ৮০ ভাগ জনগণকে পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব।
আজ মঙ্গলবার হেলথ ইকোনমিক্স স্টাডি অ্যালায়েন্স কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটে ‘বাংলাদেশের সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গঠন’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।
সেমিনারে প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এইমস ল্যাবের পরিচালক ডিজিটাল হেলথ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ মামুন, অল ওয়েল সিস্টেম স্পেসিফিকেশন ইঞ্জিনিয়ারের সহপ্রতিষ্ঠাতা এম এম আফতাব হোসেইন। সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ।
বক্তারা বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ধারণায় ২০৩০ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে ও সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। যেখানে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে কেউ দরিদ্র হয়ে পড়বে না। সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলের (এসডিজি) ১৭টি উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু সে অনুযায়ী কতটা হচ্ছে? এখনো চিকিৎসার মোট ব্যয়ের ৭২ ভাগই যাচ্ছে ব্যক্তির পকেট থেকে। খরচের অর্ধেকই চলে যাচ্ছে ওষুধপথ্য ক্রয়ে। এসডিজি অর্জন করতে হলে এই ব্যয় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে।
তাঁরা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও এখনো কাজই শুরু হয়নি। তাই অবশিষ্ট ১৩ বছরে সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব কি না সে ব্যাপারে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই বাংলাদেশে খুব শিগগিরই ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন।
এ সময় অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল্লাহ মামুন বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কোনো রেফারেল সিস্টেম নেই যার ফলে পুরো স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। অথচ শুধু প্রাইমারি (প্রাথমিক) স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ৮০ ভাগ জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা সম্ভব। দেশর স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মূল সমস্যা হলো স্বাস্থ্য পর্যাপ্ত ডেটার অভাব। যার ফলে একজন রোগীর ব্যাপারে মূল্যায়ন করতে সমস্যা হয় ডাক্তারদের। এ ক্ষেত্রে রোগীরা হেলথ টুরিজমের (বিদেশে চিকিৎসা) দিকে ধাবিত হচ্ছে। এতে করে খরচ বাড়ছে। এ ধরনের সমস্যা উত্তরণের জন্য এবং একই সঙ্গে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন ডিজিটাল হেলথ ইকোসিস্টেম।’
উল্লেখ্য, যে রোগীর যেখানে সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে, তাঁকে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থাপনাকে বলে রেফারেল সিস্টেম। চিকিৎসার জন্য সরাসরি জেলা সদর বা রাজধানীতে না গিয়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীকে নির্দিষ্ট হাসপাতালে রেফার করার ব্যবস্থা এটি।
ডিজিটাল হেলথ নিয়ে আলোচনাকালে অল ওয়েল কীভাবে বেসরকারি খাতে ডিজিটাল হেলথ নিয়ে কাজ করছে তা তুলে ধরে আফতাব হোসাইন বলেন, ‘বড় ধরনের সমস্যা বা ইমারজেন্সি কেস ছাড়া রোগীর হাসপাতালে আসার প্রয়োজন নেই। বরং এমন একটি সিস্টেম তৈরি করা প্রয়োজন যেখানে ডাক্তার ভিডিও কনফারেন্স করে রোগীর প্রাথমিক অবস্থা শনাক্ত করবেন এবং প্রয়োজনে ডাক্তার রোগীর বাসায় যাবেন। এ ছাড়া এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাসায় গিয়ে করা সম্ভব। এ ধরনের ডিজিটাল ব্যবস্থায় রোগীর ডেটাকে সংরক্ষণ করা সুবিধা হবে।’