
ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় প্রতিবছর দেশে ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ১ লাখ কোটি টাকার বেশি খরচ করে। ডায়াবেটিস রোধ করা গেলে এ টাকা দিয়ে প্রতি বছর দেশে চারটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ)) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিভেনশন অব ডায়াবেটিস মেলাইটাস (ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ) নিয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগের অনারারি প্রফেসর ডা. মধু এস মালো।
মূল প্রবন্ধে ডা. মালো বলেন, ‘তখন আমি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছিলাম। আমি কিছু ইঁদুর মডেল নিয়ে কাজ করেছি। যে ইঁদুর মডেলগুলোতে একটি এনজাইম কম ছিল। এর নাম ইন্টেস্টাইনাল এলকালাইন ফসফেটেজ। ইন্টেসটাইনাল এলকালাইন ফসফেটজের কাজ হচ্ছে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াল টক্সিনকে ধ্বংস করা। এই টক্সিনগুলো যদি রক্তে যায় তবে প্রদাহ সৃষ্টি করে। প্রদাহ যদি প্যানক্রিয়াসের বেটা সেলে আক্রান্ত হয় এটি টাইপ ওয়ান ডায়বেটিস। আর প্রদাহ যদি ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় তবে তা হচ্ছে টাইপ টু ডায়াবেটিস।’
ডা. মধু এস মালো আরও বলেন, ‘৩০-৬০ বছর বয়সী মানুষদের ডায়াবেটিস স্ক্রিনিং করতে হবে। তাঁদের মধ্যে আইপি এনজাইম কম থাকলে স্বাস্থ্য শিক্ষা দিতে হবে। এর মাধ্যমে বিশ্ব থেকে ডায়াবেটিস দূর হবে।’
অনুষ্ঠানে অন্য বক্তরা বলেন, ডায়াবেটিস একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। বিশ্বের প্রায় ৪৬ কোটির বেশি মানুষ এ রোগে ভোগেন। আরও প্রায় ৪৬ কোটি লোক প্রাথমিক ডায়াবেটিসের রোগী। সব মিলিয়ে ২০ কোটির মতো মানুষ কোনো না কোনোভাবে ডায়াবেটিস বহন করছেন। বাংলাদেশেও দিন দিন এতে আক্রান্তের হার বাড়ছে। দেশে ডায়াবেটিসের রোগী ১ কোটি ৩১ লাখের মতো। প্রাথমিক ডায়াবেটিসে ভোগা ব্যক্তির সংখ্যা আরও বেশি, সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ। অর্থাৎ ডায়াবেটিসে ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যা ৩ কোটির মতো।
গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রাণীর শরীরের আইপি এনজাইম কম হলে ডায়াবেটিস হয়। মানুষের এই আইপি এনজাইম স্টুল এলকালাইন ফসফেটেজ পরীক্ষার মাধ্যমে বের করা যাবে বলেও সেমিনারে উঠে আসে।
এ সময় বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, ‘স্টুল এলকালাইন ফসফেটেজ টেস্টের মাধ্যমে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা গেলে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। একই সঙ্গে এই পরীক্ষার মাধ্যমে আগাম ও পরবর্তী পর্যায় যদি প্রকাশ করা গেলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএসএমএমইউ গবেষণায় আরও অগ্রগতি ও উন্নতি করে ইতিহাস হতে চায়। এরই মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয় করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছে। করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না এসব বিষয়ে গবেষণা চলমান। যৌথভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট তৈরি করা হয়েছে।’