
উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের সর্ববৃহৎ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকার (ফোবানা) ৩৬তম সম্মেলন আগামী ২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে অনুষ্ঠিত হবে। তবে একই তারিখে ফোবানা থেকে বহিস্কৃত রেহান রেজা ও মাসুদ রব চৌধুরী ফোবানার নামে আরো একটি অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে। এ নিয়ে একটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি স্পষ্ট করতে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ভিআইপি মিলনায়তনে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে ফোবানার সাবেক চেয়ারপার্সন ও আউটস্ট্যান্ডিং মেম্বার জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ‘রেহান রেজা ও মাসুদ রব চৌধুরী ফোবানার কেউ নন। সংগঠন বিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকায় ওনাদের বহিস্কার করা হয়েছে। সুতরাং ফোবানার নাম ভাঙিয়ে কোনো অনুষ্ঠান করা অধিকার তাদের নেই।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ‘ফোবানা হচ্ছে একটি নন পলিটিক্যাল, নন রিলিজিয়াস একটি সংগঠন। তবে বাংলাদেশের সংবিধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফাদার অব দ্য ন্যাশন। সেটা সংবিধানে যতক্ষণ আছে মানতে হবে। বাংলাদেশকে যদি আপনি মানেন, বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত মানেন তাহলে বঙ্গবন্ধুকে মানতে হবে। এটা আমরা বিশ্বাস করি।’
তিনি বলেন, ‘আমি যখন চেয়ারম্যান ছিলাম তখন বলেছিলাম রাষ্ট্রীয়ভাবে মুজিব বর্ষ পালিত হচ্ছে। আমরা এখানে রাষ্ট্রকে রিপ্রেজেন্ট করি। তাই আমাদের এখানে মুজিব বর্ষের প্রোগ্রাম থাকবে। অতীতেও এটা ছিল। ২০১৫ সালে যখন নিউ ইয়র্কে প্রোগ্রাম করেছি। তখন আরেফিন শুভর সাথে একটি টিমসহ একটি ডকুড্রামার মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশকে উপস্থাপন করেছি। সেই ডকুড্রামা জয় বাংলা বাংলার জয় গান দিয়ে শেষ হয়েছিল।’
জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ‘ফোবানাতে কিন্তু সকলেই প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার মানুষ। সংস্কৃতির সাথে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতিশীলতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যারা সংস্কৃতি ও মুক্তমনা নয় তারা ছদ্মবেশে ফোবানার পরিবেশটাকে নষ্ট করেছেন। তাদের সাথে যুক্ত আছেন ফেডারেল ক্রিমিনালচক্র। তার প্রেক্ষিতে গতবার আমার সাথে যিনি সেক্রেটারি ছিলেন মাসুদ রব চৌধুরী এবং ভাইস চেয়ারম্যান ড. আহসান চৌধুরী হিরো তাদের দুজনকে আমরা বহিস্কার করেছিলাম। দায়িত্বে থেকে সম্মেলনে বাধা সৃষ্টির অপরাধে তাদের বহিস্কার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে তারা প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে। পরে আমরা সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে তাদের গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু তারা থেমে নেই। এবারও তারা সংগঠনের নাম ব্যাবহার করে অসাংগঠনিক কার্যক্রমে লিপ্ত হয়েছে।’
তারা কিছুদিন আগে ঢাকায় এসেছিল। এসে শুটিং ক্লাবে ‘মিট অ্যান্ড গ্রিট’ নামের একটি অনুষ্ঠান করেছে। জাকারিয়া বলেন,‘তারা মিট দ্যা প্রেস করার সাহস পায় না। একটি অনুষ্ঠান করেছে যেখানে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে পারবে না। তারা সেখানে জানিয়েছে শিকাগোতে ৫০০ জনের হলে একটি অনুষ্ঠান করবে। অথচ আমরা ফোবানা করেছি মেডিসিন স্কয়ার গার্ডেনে, গতবার ফোবানা করেছি গেইলর্ড সেন্টারে। প্রায় ১০ হাজার আসন বিশিষ্ট হলে। আর তারা সেখানে ৫০০ জনের একটি হল নিয়ে ফোবানার নামে নাটক করছেন। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে আমরা ইতোমধ্যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছি। আপনাদের মাধ্যমে আমরা সমাজের সকলকে জানাতে চাই, এ ধরণের অপশক্তির বিরুদ্ধে আপনারা সজাগ থাকবেন, তাদের সাথে ফোবানার কোনো সম্পর্ক নেই।’
জাকারিয়া চৌধুরী জানান, ফোবানা হচ্ছে একটি ফেডারেল ট্রেড মার্ক। গত ১৫ বছর আগে ইনারা ইসলাম যখন ট্রেজারার ছিলেন তখন ওনার নেতৃত্বে ট্রেড মার্ক হয়েছে। যেমন কোকাকোলা, রেড ক্রস, একটি প্রতিষ্ঠান, অন্যটি সংগঠন। এগুলো একটি ব্রান্ড। এগুলো কেউ দখল করতে পারবে না। এখন ফোবানাকে নিয়ে কে আলাদা কিছু করছে সেটাতে আসলে বড় কোনো প্রভাব ফেলে না।
এবারের আয়োজন সম্পর্কে জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আপনারা জানেন ফোবানা শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক সংগঠন না। স্কলারশীপ, ইউথ সেমিনার, কাব্য জলসা, ওমেন এমপাওয়ারমেন্ট, বিজনেস নেটওয়ার্কিং লাঞ্চ, বিজনেস সামিটসহ নানা ধরণের কার্যক্রমের মাধ্যমে এই সংগঠন বাংলাদেশের সাথে একটি কানেকটিভিটি তৈরির চেষ্টা করে। এবারও এসব হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে ৩৬তম ফোবানার ভাইস চেয়ারপার্সন ও প্রেসিডেন্ট জাহিদ হোসেন লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক কনভেনর ও আউটষ্ট্যন্ডিং মেম্বার সাদেক এম খান, সাবেক কো কনভেনার জুয়েল বডুয়া, সাবেক কো কনভেনার হাজী আব্দুল কাদের মিয়া, ইয়ুথ ফোরাম চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, কো চেয়ারম্যন আবদুল্লাহ আল মামুন, জসিম উদ্দিন প্রমুখ। উপস্থাপনায় ছিলেন সুবর্ণা নওয়াদির।