
জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ‘আমি শুনেছি, ভোটের আগের রাতে পুলিশ অফিসারেরা ব্যালট ভর্তি করেছে। এমন উদাহরণ আর কোনো দেশে আছে বলে আমি শুনিনি।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন আগের চেয়ে ভালো হবে এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। আজ সোমবার সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ ও জার্মান এনজিও ফ্রেডরিক–এবার্ট-স্টিফটুং বাংলাদেশ অফিস ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সরকার বলেছে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছেন, তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপার।’ তবে, প্রধান বিরোধী দলগুলো ভোটে অংশ নেবে, এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
ভোটারদের সচেতন করতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে তহবিলের জোগান সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচনে প্রধান দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে এ ধরনের প্রশিক্ষণে তহবিল দেওয়া সম্ভব হবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় আছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলগুলো সহসা সিদ্ধান্ত নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সকল দলের সংযত থাকার ওপর জোর দিয়ে ইতো নাওকি বলেন, সহিংসতা দ্বারা রাজনীতির গতিপথ নির্ধারিত হবে না।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, জাপানসহ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক নীতি এবং কর কাঠামোর সংস্কার দরকার হবে। কিন্তু গত তিন বছরে এমন কোনো সংস্কার হয়নি।
জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের জন্য আড়াইহাজারে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত করা হচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশও দরকার। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত কোম্পানিগুলো আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
চলতি নভেম্বর মাসের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের কর্মসূচির উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ চলছে।
জাপান বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে চায় উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রতিরক্ষা সামগ্রী বাংলাদেশে রপ্তানি করতে চায় জাপান। এখন মোবাইল রাডার ইউনিট রপ্তানি নিয়ে কথা হচ্ছে।
বাংলাদেশে তরুণদের জন্য উন্নত শিক্ষা ও দক্ষতা বাড়াতে সতর্ক পদক্ষেপ দরকার বলে জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, জাপান প্রশিক্ষিত কর্মী বিভিন্ন দেশ থেকে নিচ্ছে। মাত্র একজন বাংলাদেশি কর্মী পুরো প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জাপান যেতে পেরেছে। সে সেখানে কাজ করছে।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, মিয়ানমার ও রাখাইনে বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের ফেরার জন্য অনুকূল নয়। তবে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর জন্য প্রস্তুত করা দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সিজিএস নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, যেখানে ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের চেয়ারপারসন মুনিরা খান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, আওয়ামী লীগের এ কে ফায়জুল হক, সিজিএস চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী এবং এফইএস বাংলাদেশ কর্মসূচি সমন্বয়ক সাধন কুমার দাসসহ অন্যরা অংশ নেন।