নতুন মোড়কেও পুরোনো ছবি

30


পাওয়ার হিটিংয়ে দুর্বলতা বহু পুরোনো, স্কিল হিটিংয়ের মাধ্যমে সেটাকে পুষিয়ে নেওয়ার আত্মবিশ্বাসের কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর জিম্বাবুয়ে সফরেও ব্যাটিংয়ের সেই দুর্বলতা থেকেই গেল। দুই সিরিজে ব্যাটারদের পারফরম্যান্সে তো উন্নতি হয়ইনি, অবনতি হয়েছে বোলারদেরও।

গত মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরুর কথা বলেছিল বাংলাদেশ। পূর্ণশক্তির দল নিয়েও ব্যাটিং-বোলিং ব্যর্থতায় ২-০ ব্যবধানে উইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ হেরেছিলেন মাহমুদউল্লাহরা। সেই ব্যর্থতায় অধিনায়কত্বই হারালেন মাহমুদউল্লাহ। অধিনায়ক বদলে, নতুন দল গড়েও ফল ভিন্ন কিছু হয়নি। এবার জিম্বাবুয়েতেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারে প্রকট হয়ে উঠেছে ব্যাটার-বোলারদের পুরোনো দুর্বলতা।

নতুন মোড়কেও পুরোনো ছবি

বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে চারটি ভিন্ন কন্ডিশনে অন্তত ১২টি ম্যাচ খেলার কথা বাংলাদেশের। এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়েতে খেলা ৬ ম্যাচে টি-টোয়েন্টিসুলভ কোনো পারফরম্যান্সের ছাপ রাখতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। জিম্বাবুয়ে সফরের আগে ‘নতুন ব্র্যান্ডের’ টি-টোয়েন্টি দল গড়ার কথা বলা হচ্ছিল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তিন ম্যাচ শেষে পুরোনো ব্র্যান্ডেরই মনে হবে বাংলাদেশকে। সিনিয়রদের বিশ্রামে রেখে তারুণ্যনির্ভর দলকে বাজিয়ে দেখার বিসিবির প্রকল্পও এখন মুখ থুবড়ে পড়ার পথে। প্রশ্ন আছে হুটহাট তাদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েও।

গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ডমিনিকায় টি-টোয়েন্টি সিরিজে স্পোর্টিং উইকেট পেয়েছিল বাংলাদেশ। ক্যারিবীয় দ্বীপের এই ব্যাটিংসহায়ক উইকেটে দুই হাতে রান বিলিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। নাসুম, শরীফুল, তাসকিন ও মোস্তাফিজ দলের চার নিয়মিত বোলারের বোলিং ইকোনমি গড় ছিল ১০-এর বেশি। কিছুটা মুখ রক্ষা করেছেন সাকিব আল হাসান ও শেখ মেহেদী।

উইন্ডিজ সিরিজে বোলারদের মতো বাংলাদেশ ব্যাটারদের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবিও ফুটে উঠেছিল। তিন বছর পর জাতীয় দলের দরজা খোলা এনামুল হক বিজয় তিন ম্যাচে করেছিলেন মোট ২৯ রান। ৯ দশমিক ৬৬ গড়ে তাঁর ব্যাটিংয়ের স্ট্রাইকরেট ছিল ১১৬। আরেক তরুণ ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার সিরিজের এক ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়ে করেছিলেন ২ রান। ব্যাটিংয়ে কিছুটা ভালো করেছেন সাকিব, লিটন দাস, আফিফ হোসেন ও সোহান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যর্থতা জিম্বাবুয়েতে ঘোচাতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। হারারের স্পোর্টিং উইকেটে প্রথম ও শেষ ম্যাচে বোলিং ব্যর্থতাই ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে ছিলেন বিজয়-মুনিম-শান্তরা। জিম্বাবুয়েতে বাংলাদেশের সবচেয়ে খরচে বোলার ছিলেন নাসুম আহমেদ। ২ ম্যাচে তাঁর ইকোনমি রেট ১৩। এক ম্যাচ খেলা তাসকিনের ইকোনমি ১০ দশমিক ৫০। ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু মেহেদী—৩ ম্যাচে ৫ দশমিক ৪২ ইকোনমি তাঁর।

ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন টপ অর্ডার ব্যাটাররা। তিন ম্যাচে খেলা ওপেনার বিজয় ১৮ দশমিক ৬৬ গড়ে করেছেন ৫৬ রান, স্ট্রাইকরেট ১০১ দশমিক ৮১। আরেক ওপেনার মুনিম ২ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে ৫ দশমিক ৫০ গড়ে করেন ১১ রান, স্ট্রাইকরেট ৬৮ দশমিক ৭৫।

নতুন ব্র্যান্ডের টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব পাওয়া নুরুল হাসান সোহান অবশ্য পাশে দাঁড়ালেন সতীর্থদের। গতকাল দেশে ফিরে বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘খেলোয়াড়দের খারাপ সময়, ভালো সময় দুটোই যায়। আমাদের উচিত যার ভালো যাচ্ছে, তাকে সমর্থন করা; যার খারাপ যাচ্ছে, তার পাশে থাকাও জরুরি।’

এ মাসের শেষ সপ্তাহে আরব আমিরাতে হতে যাচ্ছে এশিয়া কাপ। এরপর নিউজিল্যান্ডে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজের পরই অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বড় মঞ্চে পা রাখার আগে বাংলাদেশের ব্যাটার-বোলারদের এমন ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা নিশ্চিত চিন্তা বাড়াচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।





Source link