রুশদির হামলাকারী কে এই হাদি মাতার

39


নিউইয়র্কের একটি বক্তৃতা অনুষ্ঠানের মঞ্চে গতকাল শুক্রবার ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েছেন বুকারজয়ী ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি। হামলার পরপরই তাঁকে হেলিকপ্টারে করে পেনসিলভানিয়ার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খ্যাতিমান এ লেখকের এজেন্ট অ্যান্ড্রু উইলি বলেছেন, রুশদির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তিনি এখন ভেন্টিলেটর সাপোর্টে (কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়া) রয়েছেন। কথা বলছেন পারছেন না। তিনি সম্ভবত একটি চোখও হারাতে পারেন। তাঁর বাহুর স্নায়ু বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং লিভারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

এদিকে নিউইয়র্ক স্টেট পুলিশ জানিয়েছে, এ হামলার পর নিউজার্সির ফেয়ারভিউ থেকে হাদি মাতার নামে ২৪ বছর বয়সী একজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। 

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, হাদি মাতারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে তাঁকে ‘শিয়া চরমপন্থী’ বলে মনে হয়েছে। তিনি খানিকটা ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) প্রতিও সহানুভূতিশীল। 

আইআরজিসি ও হাদি মাতারের মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে মাতারের মোবাইল ফোনে ম্যাসেজিং অ্যাপে কাসেম সোলাইমানির ছবি খুঁজে পেয়েছেন নিউ ইয়র্ক পুলিশ। ইরানি কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি ২০২০ সালে মার্কিন হামলায় নিহত হয়েছেন। 

হাদি মাতার নিউ জার্সির ফেয়ারভিউয়ের বাসিন্দা। মার্কিন পুলিশ তাঁর জাতীয়তা, পূর্ববর্তী অপরাধের ইতিহাস ইত্যাদি খতিয়ে দেখছে। 

নিউইয়র্ক স্টেট পুলিশ জানিয়েছে, হাদি মাতার একাই এ হামলায় অংশ নিয়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি ব্যাগপ্যাক ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে।

রুশদির ওপর হামলা সম্পর্কে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার শিতৌকা ইনস্টিটিউশনের এক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের মঞ্চে ছিলেন সালমান রুশদি। ওই সময় তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক। ঠিক তখনই এক ব্যক্তি বেশ কয়েকবারের বাধা উপেক্ষা করেই মঞ্চে উঠে যান এবং রুশদিকে ছুরিকাঘাত করেন। 

অন্যদিকে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, মঞ্চে সালমান রুশদির সঙ্গে থাকা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী হেনরি রিসও মাথায় সামান্য আঘাত পেয়েছেন। তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রিস একটি অলাভজনক সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা।

সালমান রুশদিকে তাঁর লেখার জন্য ইরানি নেতৃবৃন্দ হত্যার ঘোষণা দিয়েছে ১৯৮৯ সালে। অবশ্য ইরান পরে এই ঘোষণা তুলে নেয়। সে সময় ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা প্রয়াত আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি সালমান রুশদির চতুর্থ উপন্যাস ‘স্যাটানিক ভার্সেস’-এ ইসলামের বিরুদ্ধে অবমাননামূলক বিষয় রয়েছে উল্লেখ করে রুশদিকে হত্যা করার জন্য মুসলমানদের আহ্বান জানিয়ে ১৯৮৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি ফতোয়া জারি করেন।’

খ্যাতিমান এই লেখকের জন্ম ১৯৪৭ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে। ১৯৭৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি ১৪টি উপন্যাস লিখেছেন। বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার বুকার পুরস্কারের জন্য তিনি পাঁচবার মনোনয়ন পেয়েছেন। রুশদি তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’-এর জন্য ১৯৮১ বুকার পুরস্কার অর্জন করেন। ইরান তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করার পর দীর্ঘ ৯ বছর আত্মগোপনে ছিলেন বিশ্বখ্যাত এই লেখক।





Source link